Sunday, January 19, 2014

AnandaBazar Patrika (19.01.2014)



একটি নয়, দুটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান মিলল মোগলমারিতে

কটি নয়, দুটো বৌদ্ধবিহার মুখোমুখি দুটিই ষষ্ঠ শতকের একটির নাম পড়া গিয়েছে বন্দক অন্যটির নাম পড়ার চেষ্টা চলছে হিউয়েন সাং বা জুয়ান জ্যাং কথিত বৌদ্ধবিহারগুলির মধ্যে এই দুটি নবতম আবিষ্কারপশ্চিম মেদিনীপুরের মোগলমারি প্রত্নস্থলে সম্প্রতি উৎখনন করে এই দুটি বিহারের সন্ধান পেয়েছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “পুব পশ্চিম দিকে মুখোমুখি দুটি বৌদ্ধ বিহার ছিলদুটিই সমসাময়িকসম্প্রতি এই প্রত্নস্থল থেকে মোট চারটি পোড়ামাটির নামফলক পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে দুটি প্রায় অক্ষত অমলবাবু বলেন, “মোটামুটি অক্ষত ফলক দুটির প্রাথমিক ভাবে পাঠোদ্ধার করা গিয়েছে এই দুটিতেই ষষ্ঠ শতকের ব্রাহ্মী হরফে সংস্কৃত ভাষায় লেখা রয়েছে, ‘শ্রী বন্দক মহাবিহারে আর্য ভিক্ষুসঙ্ঘঃ অর্থাৎ, একটি বিহারের নাম ছিল বন্দকঅন্য বিহারটির নাম পড়ারও চেষ্টা চলছেপ্রাচীন লিপি মুদ্রা বিশেষজ্ঞ সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, “আর্য শব্দটির এখানে অর্থ সম্মানিত অর্থাৎ বাক্যটির মানে হচ্ছে, এই মহাবিহারে সম্মানিত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্ঘ ছিলদুটি প্রায় অক্ষত নামফলকের উপরে রয়েছে ধর্মচক্রের দুদিকে হরিণের ছবি সুরেশবাবু জানান, বুদ্ধ প্রথম ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছিলেন সারনাথে যার প্রাচীন নাম ছিল মৃগদাব অর্থাৎ হরিণের উদ্যান তাই সারনাথের এই প্রতীকী ছবিটি বৌদ্ধরা অনেক সময়েই সসম্ভ্রমে ব্যবহার করতেন বৌদ্ধ মহাবিহারেও সেই চিত্র পাওয়া খুবই স্বাভাবিকএর আগে পশ্চিমবঙ্গে আরও দুটি বড় বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে একটি মুর্শিদাবাদের কর্ণসুবর্ণের রক্তমৃত্তিকা, অন্যটি মালদহের জগজীবনপুরে নন্দদীর্ঘিকা বিহার এই দুটি বিহার থেকেই নামফলক পাওয়া গিয়েছিল রক্তমৃত্তিকা ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের মহাবিহার, নন্দদীর্ঘিকা নবম শতকের মাঝামাঝি সময়ের জুয়ান জ্যাং সপ্তম শতকে জানিয়েছিলেন, তাম্রলিপ্তের আশেপাশেও বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে মোগলমারির এই বিহারটি সেই বিহারগুলিরই অন্যতম বলে মনে করছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা অমলবাবু বলেন, “মোগলমারির বিহারগুলিতে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতকের মধ্যেই তিন দফায় পুনর্গঠন হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সেক্ষেত্রে এই বিহারগুলি সে কালে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল অন্তত দুশো বছর ধরে সজীব ও ছিলসুরেশবাবু জানান, এই বিহার বা তার থেকে আকারে বড় মহাবিহারগুলিতে পুজার্চনা হত, লেখাপড়াও হত পুথি নকল করা হত সে কারণেই অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু সেখানে নিয়মিত থাকতেন আসতেন অতিথিরাও তাই রীতিমতো সম্পদশালীও ছিল এই বৌদ্ধ উপাসনা পাঠস্থানগুলি মোগলমারির মহাবিহারটি থেকেও সম্প্রতি মিলেছে ধাতুমুদ্রা সুরেশবাবু বলেন, “ওই ধাতুমুদ্রাটির গায়ের লিপি থেকে বোঝা যাচ্ছে, তা রাজা সমাচার দেবের মুদ্রা অতিথিদের হাত ধরেই বা দান হিসেবে ওই মুদ্রা মহাবিহারে আসতে পারেএই প্রত্নস্থলটির সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে মোগলমারি তরুণ সেবা সঙ্ঘ পাঠাগার নামে স্থানীয় একটি সংগঠনও রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের পক্ষে জানানো হয়েছে, ২০০২ সাল থেকে এই প্রত্নস্থলের খননকার্য শুরু হয়েছিল মাটি থেকে তুলে আনার পরে রোদ-হাওয়ার সংস্পর্শে এসে কিছু পুরাবস্তুর ক্ষতিও হয়েছিল তবে তার অনেকটাই ইতিমধ্যেই সংস্কার করা হয়ে গিয়েছে

AnandaBazar Patrika 19.01.2014

No comments:

Post a Comment