ফের খননকার্য শুরু হচ্ছে মোগলমারিতে :
প্রায় ন’বছর খননকাজ চালিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগ আবিষ্কার করেছিল একটি ‘বৌদ্ধবিহার’। ২০০৩-০৪ সাল থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের মোগলমারিতে ছ’দফায় উৎখনন ও প্রচারের আলোয় এসেছিল সেই বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। দেড় বছর আগে শেষ হওয়া খননকাজের পরে থমকে ছিল তার সংস্কার। তাই এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল স্থানীয়দের মনে। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফের খনন করে সংরক্ষণ ও সংগ্রহশালা গড়তে চলেছে রাজ্য পুরাতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় বিভাগ। শুক্রবার দুপুরে তারই প্রস্তুতিতে মোগলমারিতে বিভাগের উপ-অধিকর্তা অমল রায়ের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শনে এলেন।
খননকার্য শুরু হবে ২০ নভেম্বর থেকে। খননের প্রাথমিক খরচের জন্য ৮ লক্ষ টাকা বিডিও-কে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৭৫ লক্ষ টাকা দ্বিতল একটি সংগ্রহশালা ভবন গড়ার জন্য বরাদ্দ হয়েছে। অমলবাবু বলেন, “এই এলাকাটি মার্চেই সৌধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা একটি এই সংক্রান্ত বোর্ডও এখানে এ বার লাগাব। জমি নিয়েও কোনও সমস্যা নেই।” যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যে বৌদ্ধবিহার বলে ঘোষণা করেছিলেন। সে প্রসঙ্গে অমলবাবু বলেন, “বৌদ্ধবিহার কি না তা সম্পূর্ণ খনন না হওয়ার আগে এখনই বলা যাবে না।”
বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ক’টি স্থান ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে, তার মধ্যে দাঁতন অন্যতম। এই এলাকার নামকরণ নিয়েও নানা মত রয়েছে। তবে অধিকাংশরই মতে এই নামকরণ বুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে। বৌদ্ধ গ্রন্থ দাঠাবংশের বিবরণ অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে বুদ্ধের একটি দাঁত এই স্থানে ছিল। সেই সময় থেকেই এই স্থানটির নাম হয়ে যায় দন্তপুর। অনেকের মতেই এই দন্তপুরই আসলে দাঁতন।
পরে হিউয়েন সাং-ও তাম্রলিপ্ত বন্দরে একাধিক বৌদ্ধবিহারের কথা বলেছিলেন। দাঁতনের মোগলমারিতে ছ’টি দফায় উৎখননের পরে এটিকে হিউয়েন সাং বর্ণিত তাম্রলিপ্ত এলাকার একটি বৌদ্ধবিহার বলেই দাবি করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক অশোক দত্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রত্নস্থলটি খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর সমসাময়িক। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উৎননের পর এই বৌদ্ধবিহারটি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খননকালে এই বিহারের সীমানা প্রাচীরটির চারিদিকে প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। এ ছাড়াও আবিষ্কার হয়েছে স্টাকো (চুন, মার্বেল গুঁড়ো ও বালির মিশ্রণ), অলঙ্কৃত দেওয়াল, স্টাকো নির্মিত ১৪টি মূর্তি, ৪২ রকমের কারুকার্যে মোড়া ইট, পোড়ামাটির কিছু বাসনপত্র, ২০টি উৎসর্গ ফলক ইত্যাদি। গত বছরের ২৩ মে পর্যন্ত চলেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসন্ধানপর্ব। তবে ধ্বংসের আশঙ্কায় এর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল আগেই। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদায় একটি পঞ্চায়েত সমিতি, একটি দাঁতন ভট্টর কলেজ ও একটি যে এলাকায় বৌদ্ধবিহার, সেখানকার তরুণ সেবা সঙ্ঘের উদ্যোগে মোট তিনটি ছাউনি দিয়ে কোনও রকমে খোলা রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তবে যথাযথ সংরক্ষণ না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে স্টাকোর কাজ। এ দিকে বর্ষা ও পুজোর সময়ের ঝড়-বৃষ্টিতে অনেকাংশেই জল ঢোকায় ক্ষতি হয়েছে চুনের আস্তরণের। এই নিয়েই ক্ষোভ বাড়ছিল বাসিন্দাদের। ওই খননে মজুরের কাজ করেন স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীকান্ত সাহু। তিনি বলেন, “অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। খনন কাজ হলে এলাকার মানুষ হিসেবে কিছু রোজগারের সুযোগ পাই। আবার ওঁরা এসেছেন শুনছি। খোঁড়াখুঁড়ি হবে। আবারও কিছু কাজ পাব ভেবে ভাল লাগছে।”
তরুণ সেবা সঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদক অতনু প্রধান বলেন, “এত দিন কোনও সংস্কার না হওয়ায় অবহেলায় পড়ে রয়েছে এত বড় আবিস্কার। গত বর্ষায় খোলা ট্রেঞ্চে জল জমেছে। ক্ষয়ে গিয়েছে স্টাকোর কাজ। খননকার্যের সঙ্গে সংরক্ষণ হলে এটা এড়ানো যেত। খননকার্য ও সংরক্ষণের কাজে জন্য রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব। আমাদের আশার আলো জেগেছে তবে এখন কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কিছুই আর বিশ্বাস হয় না।” অমলবাবু বলেন, “যা দেখছি তাতে পুরো কাজ সম্পন্ন হতে প্রায় ১০ বছর লাগবে। আমরা আপাতত মার্চ পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা নিয়েছি। যদিও আমাদের লাইসেন্স রয়েছে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রথমে সমীক্ষা শুরু হয়ে গেলেই উৎখনন হবে। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পুরোটা উন্মুক্ত করা। এর পরই সংরক্ষণ। এ কাজে টাকার কোনও অভাব হবে না।”
খননকার্য শুরু হবে ২০ নভেম্বর থেকে। খননের প্রাথমিক খরচের জন্য ৮ লক্ষ টাকা বিডিও-কে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৭৫ লক্ষ টাকা দ্বিতল একটি সংগ্রহশালা ভবন গড়ার জন্য বরাদ্দ হয়েছে। অমলবাবু বলেন, “এই এলাকাটি মার্চেই সৌধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা একটি এই সংক্রান্ত বোর্ডও এখানে এ বার লাগাব। জমি নিয়েও কোনও সমস্যা নেই।” যদিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যে বৌদ্ধবিহার বলে ঘোষণা করেছিলেন। সে প্রসঙ্গে অমলবাবু বলেন, “বৌদ্ধবিহার কি না তা সম্পূর্ণ খনন না হওয়ার আগে এখনই বলা যাবে না।”
বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরের যে ক’টি স্থান ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে, তার মধ্যে দাঁতন অন্যতম। এই এলাকার নামকরণ নিয়েও নানা মত রয়েছে। তবে অধিকাংশরই মতে এই নামকরণ বুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে। বৌদ্ধ গ্রন্থ দাঠাবংশের বিবরণ অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে বুদ্ধের একটি দাঁত এই স্থানে ছিল। সেই সময় থেকেই এই স্থানটির নাম হয়ে যায় দন্তপুর। অনেকের মতেই এই দন্তপুরই আসলে দাঁতন।
পরে হিউয়েন সাং-ও তাম্রলিপ্ত বন্দরে একাধিক বৌদ্ধবিহারের কথা বলেছিলেন। দাঁতনের মোগলমারিতে ছ’টি দফায় উৎখননের পরে এটিকে হিউয়েন সাং বর্ণিত তাম্রলিপ্ত এলাকার একটি বৌদ্ধবিহার বলেই দাবি করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক অশোক দত্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রত্নস্থলটি খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর সমসাময়িক। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উৎননের পর এই বৌদ্ধবিহারটি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খননকালে এই বিহারের সীমানা প্রাচীরটির চারিদিকে প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। এ ছাড়াও আবিষ্কার হয়েছে স্টাকো (চুন, মার্বেল গুঁড়ো ও বালির মিশ্রণ), অলঙ্কৃত দেওয়াল, স্টাকো নির্মিত ১৪টি মূর্তি, ৪২ রকমের কারুকার্যে মোড়া ইট, পোড়ামাটির কিছু বাসনপত্র, ২০টি উৎসর্গ ফলক ইত্যাদি। গত বছরের ২৩ মে পর্যন্ত চলেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসন্ধানপর্ব। তবে ধ্বংসের আশঙ্কায় এর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল আগেই। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদায় একটি পঞ্চায়েত সমিতি, একটি দাঁতন ভট্টর কলেজ ও একটি যে এলাকায় বৌদ্ধবিহার, সেখানকার তরুণ সেবা সঙ্ঘের উদ্যোগে মোট তিনটি ছাউনি দিয়ে কোনও রকমে খোলা রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তবে যথাযথ সংরক্ষণ না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে স্টাকোর কাজ। এ দিকে বর্ষা ও পুজোর সময়ের ঝড়-বৃষ্টিতে অনেকাংশেই জল ঢোকায় ক্ষতি হয়েছে চুনের আস্তরণের। এই নিয়েই ক্ষোভ বাড়ছিল বাসিন্দাদের। ওই খননে মজুরের কাজ করেন স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীকান্ত সাহু। তিনি বলেন, “অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। খনন কাজ হলে এলাকার মানুষ হিসেবে কিছু রোজগারের সুযোগ পাই। আবার ওঁরা এসেছেন শুনছি। খোঁড়াখুঁড়ি হবে। আবারও কিছু কাজ পাব ভেবে ভাল লাগছে।”
তরুণ সেবা সঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদক অতনু প্রধান বলেন, “এত দিন কোনও সংস্কার না হওয়ায় অবহেলায় পড়ে রয়েছে এত বড় আবিস্কার। গত বর্ষায় খোলা ট্রেঞ্চে জল জমেছে। ক্ষয়ে গিয়েছে স্টাকোর কাজ। খননকার্যের সঙ্গে সংরক্ষণ হলে এটা এড়ানো যেত। খননকার্য ও সংরক্ষণের কাজে জন্য রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব। আমাদের আশার আলো জেগেছে তবে এখন কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কিছুই আর বিশ্বাস হয় না।” অমলবাবু বলেন, “যা দেখছি তাতে পুরো কাজ সম্পন্ন হতে প্রায় ১০ বছর লাগবে। আমরা আপাতত মার্চ পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা নিয়েছি। যদিও আমাদের লাইসেন্স রয়েছে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রথমে সমীক্ষা শুরু হয়ে গেলেই উৎখনন হবে। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য পুরোটা উন্মুক্ত করা। এর পরই সংরক্ষণ। এ কাজে টাকার কোনও অভাব হবে না।”
No comments:
Post a Comment